1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

আমাদের ক্রমশ বদলে দিচ্ছে এই করোনা–সময়

  • Update Time : শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০
  • ৩৫৪ Time View

উপমন্যু রায়

বছর গড়িয়ে যাচ্ছে, অথচ করোনার ক্রোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার তেমন কোনও সুনির্দিষ্ট আলোর পথ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও রাশিয়া–সহ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে কোভিড–১৯ ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির কথা ঘোষণা করেছে। হয়তো তাদের গবেষণা ও পরীক্ষানিরীক্ষা সফল হওয়ার পথেই। কিন্তু সার্বিক ভাবে সকলের জন্য এখনও সেইসব প্রতিষেধক চালু করা যায়নি। ফলে প্রতিদিনই সংক্রমিতের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই মৃত্যুর ধারাও অব্যাহত।
ফেলে আসা সাত–আট মাসে এই করোনা জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি যতখানি করার, ততখানি তো করেছেই। পাশাপাশি পৃথিবীবাসী মানুষের মানসিকতায়ও একটা বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। প্রতি মুহূর্তে আমাদের চার পাশে যাদের দেখছি, অথবা আমরা নিজেরাও যদি নিজেদের দিকে দৃষ্টি দিই, তা হলে সেই পরিবর্তনটা সহজেই মালুম হয়ে যায়। বুঝতে অসুবিধে হয় না করোনা–কালের আগের পৃথিবী আর করোনা সময়ের পৃথিবীর মধ্যে তফাত অনেকটাই। অধিকাংশ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিশাল একটা প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই কোভিড–১৯ ভাইরাস। সেই চাপ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি হয়ে থাকার যন্ত্রণা। পাশাপাশি আছে সংক্রমিত হওয়ার ভয়।

হ্যাঁ, পরিবর্তন হয়েছে পৃথিবীর। তবে আমি মনে করি, এই পরিবর্তনটা ইতিবাচক দিকেও হতে পারত। বা, এখনও পারে। কারণ, বর্তমান পৃথিবীর সমস্ত মানুষই আজ এই বিপদের মধ্যে পড়ে গিয়েছে। এই বিপদ থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে একমাত্র মানুষই। এই বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে একমাত্র তারাই। তাই আশা করা গিয়েছিল পরম আত্মীয়তার এক নিবিড় বন্ধনে জড়াবে পৃথিবীর সমস্ত স্তরের মানুষ। —জড়ায়নি যে, সে কথা নিশ্চিত ভাবে এখনও বলা যাবে না। কেন না, ‘স্যাটেলাইট আর কেবলের হাতে’ বন্দি হলেও পৃথিবীটা কিন্তু কম বড় নয় এখনও। এই বিশাল পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একটু একটু করে মানুষের শ্রেণিহীন ভালবাসা যে জেগে উঠছে না, সে কথা বলা বোধ হয় ঠিক হবে না।
এরই মধ্যে ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশের কিছু জায়গায় তার কয়েকটি আমরা প্রমাণ পেয়েছি। দেখেছি, সেখানে প্রতিবেশীর জন্য মানুষ কী সহজে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে! সংখ্যাটা হয়তো খুব বেশি নয়। আবার, সত্য হল, হয়তো সমস্ত ঘটনাই এখনও আমরা জানতে পারিনি। যতটুকু জানতে পেরেছি, তাই–ই বা কম কী! তা নিয়ে তো আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি নতুন একটা পৃথিবীর। আশা তো করতে পারি একটা সোনালি সকালের।

পাশাপাশি এ কথাও সত্য, চারদিকে অনেক নেতিবাচক ঘটনাও দেখতে পাচ্ছি আমরা। তৃতীয় বিশ্বের, বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলির দিকে তাকালে মাঝে মধ্যে যে সব ঘটনার কথা জানতে পারছি, তা কখনও কখনও চমকে দিচ্ছে। হয়তো এর জন্য দায়ী সংবাদ মাধ্যমই। অপ্রিয় হলেও এ কথা খুব একটা অস্বীকার করা যাবে না যে, এখানে নেতিবাচক এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বমূলক সাংবাদিকতার দাপট কম নয়। ফলে নেতিবাচক ঘটনার কথাই বেশি প্রকাশ হয়। আর আমরাও সংবাদ মাধ্যম সূত্রে সে–সব জানতে পারি।

এই প্রসঙ্গে আমার প্রিয় এবং জন্ম–শহর কলকাতা এবং তার আশেপাশের কিছু অঞ্চলের কয়েকটি ঘটনার কথা বলা যায়। অসুস্থ স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করতে পারলেও অ্যাম্বুল্যান্সে তুলতে পারেননি স্ত্রী। সেই দৃশ্য দেখতে পেয়েও তাঁকে সাহায্য করতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেননি। এমনকী, পিপিই পোশাক পরিহিত অ্যাম্বুল্যান্স চালকও নির্বিকার থেকেছেন। সকলেরই ভয়, অসুস্থ ব্যক্তিটি যদি করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকেন, তা হলে কী হবে? তাঁরাও তো সংক্রমিত হয়ে যেতে পারেন! শেষে ওই রাস্তাতেই বিনাচিকিৎসায় মরতে হয়েছে সেই অসহায় ভদ্রমহিলার অসুস্থ স্বামীকে।
এ ছাড়া, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের প্রতিও পড়শিদের অমানবিক আচরণ করার খবর পাওয়া গিয়েছে এই শহরেই। তাঁদের অনেককে নাকি বাড়িতে থাকতে দিতে আপত্তি করেছেন প্রতিবেশীরা। কারণ, হাসপাতাল থেকে করোনা ভাইরাস তাঁদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এলাকায়। আবার, রাস্তায় অসুস্থ ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেছেন পথচলতি অনেকেই। কিন্তু সাহায্য করতে এগিয়ে যাননি কেউ। কারণ কিন্তু একই। ওই ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত কিনা, তাঁরা জানেন না। শেষে পুলিশ এসে নিয়ে গিয়েছে তাঁকে।

এমনকী, রাস্তাঘাটে কেউ বিপদে বা বিপাকে পড়লেও কেউ আর সাহায্য করতে সে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন না। আবার, সত্যিই যখন কোনও ব্যক্তির করোনা সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে, তখন সেই বাড়িকে এক প্রকার পরিত্যক্ত করে দেওয়ার মতো ঘটনাও এই শহর বা শহরতলিতেই ঘটেছে। অন্যদিকে, পরিচিত বা অল্পপরিচিত মানুষজনও করোনা–রুখতে নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে গিয়ে একে অপরের কাছ থেকে ক্রমশ যেন দূরে সরে যাচ্ছেন!

বলতে দ্বিধা নেই, ঘটনাগুলি শুধু যে প্রীতিকর নয়, তা নয়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে চরম নিষ্ঠুর এবং মর্মান্তিকও। জানি, ঘটনাগুলির পিছনে যাঁদের নিষ্ঠুরতার ছবি ভেসে উঠছে, তাঁদেরও সেইজন্য পুরোপুরি দায়ী করা যায় না। এ কথা ঠিক, করোনা সংক্রমণ মানেই যে মৃত্যু নয়, তা এতদিনে নিশ্চয়ই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, যতদিন যাচ্ছে, ততই বোঝা যাচ্ছে, এই ভাইরাসের মোকাবিলা করার মতো শক্তি মানুষের শরীরেই ধীরে ধীরে মজুত এবং মজবুত হচ্ছে। তবু করোনা মানেই তো একটা ভয়। অন্তত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (‌হু)‌ এবং সংবাদ মাধ্যমগুলো মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে অতি সক্রিয় হয়ে করোনার যে ছবি এঁকে দিয়েছে সকলের মনে, তাতে সকলেই এখন একটা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
তাঁরা মনে করছেন, করোনা মানেই যেমন মৃত্যু নয়, তেমনই করোনা হলে যে কয়েকদিন চিকিৎসার পর হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে আসা যাবেই, সে কথাও তো নিশ্চিত ভাবে কেউ বলতে পারবেন না। তাই করোনা–ভয় অধিকাংশ মানুষকেই ভয়ঙ্কর একটা মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সেই চাপই তাঁদের ধীরে ধীরে এত আত্মকেন্দ্রিক এবং হয়তো স্বার্থপরও করে দিচ্ছে। তাই তাঁদের এমন আচরণকে পুরোপুরি যুক্তিহীন বলে উড়িয়েও দেওয়া যায় না। হু এবং সংবাদ মাধ্যমগুলির সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সতর্কবার্তাও তাঁদের মধ্যে এমন নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে দিয়ে থাকতে পারে।

তাই এমন আচরণের জন্য তাঁদের দোষী করা যায় না, যেমন সত্য, তেমনই এ কথা এখন মেনে নিতে হচ্ছে, এই করোনা–সময় আমাদের অনেক–অনেকটাই বদলে দিচ্ছে। মাসের পর মাস ধরে চলা অসহনীয় লকডাউন আমাদের অনেক ক্লান্ত যেমন করেছে, তেমনই জীবিকার প্রশ্নে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলেও দিয়েছে। ভারতের দিক থেকে বলা যায়, এ দেশে এখন আনলক পর্যায় শুরু হয়েছে এবং এখনও চলছে। তাই মানুষ বাড়ির বাইরে বের হতে পারলেও চলাফেরার ক্ষেত্রে নানা বিধিনেষধ আরোপ করা রয়েছে। মানে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা, —আর কী! সেটাও আমাদের চাপে রাখছে অনেকটা।
ফলে লকডাউন এবং আনলক পর্যায় মিলিয়ে করোনার বিরুদ্ধে একটা লড়াই কোনও কোনও সময় যেন নিজের সঙ্গে নিজেরও একটা লড়াইয়েরও সূচনা করে দিয়েছে। আর সেই লড়াই লড়তে লড়তে অনেকেই যেন এখন একটা অবসাদের চক্রব্যূহে পড়ে গিয়েছে। এটা একটা মারাত্মক দৃষ্টিভঙ্গীরও জন্ম দিচ্ছে অনেকের মনে। সত্যি কথা বলতে কী, এই মনোভাব যদি কাটিয়ে ওঠা না যায়, আগামিদিনগুলি আমাদের কাছে যে খুব একটা শুভজনক হবে না, তা বুঝতে বোধ করি খুব বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার নেই।

—না, সেই পৃথিবী আমাদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। আমরা কেউই চাইব না, আমাদের সামনে তেমন একটা পৃথিবী তৈরি হোক। তা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে পৃথিবীর। আবার আমরা সেই প্রাগৈতিহাসিক সময়ে ফিরে যাব। যেখানে ডারউইনের ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ তত্ত্বের সার্থকতা মেনে যোগ্য প্রাণীরাই টিকে থাকতে পারবে পৃথিবীতে। যারা অসহায়, তারা ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে যাবে (‌বাস্তবিকই তো গিয়েছে)‌ জীবজগৎ থেকে। কিন্তু যারা শারীরিক শক্তির জোরে পৃথিবীতে টিকে ছিল, তারাও শেষ অবধি টিকে থাকতে পারেনি। ডাইনোসরদেরও একদিন হারিয়ে যেতে হয়েছে।
এখন মানুষ নামে শ্রেণির মানুষগুলির মধ্যেও যদি তৈরি হয়ে যায় এমন নিয়ম, যারা যোগ্য অর্থাৎ শক্তিশালী, তারাই বেঁচে থাকবে, বাকিদের মরতে হবে, তা হলে কী হবে? তা হলে এই আত্মকেন্দ্রিক মানুষের পৃথিবী ডেকে আনতে পারে এক ভয়ঙ্কর পরিণাম। সেই পরিণাম কিন্তু সমষ্টিগত ধ্বংসের পথ সুগম করে দিতে পারে। তবে, তা যদি হয়, তার আগেই ঘটে যাবে আরও একটি বিপর্যয়। আর তা হল, মানবিকতার বিপর্যয়। চোখের সামনে আমরা তখন হয়তো দেখব মাৎস্যন্যায়ের মতো অবস্থা। তা নিশ্চয়ই আমাদের কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না! তাই আমরা চাইব না সেই পৃথিবী তৈরি হোক।

তাই আজ যে ভাবেই হোক, কাটিয়ে উঠতে হবে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং ভয়। পাশের মানুষটির কাছে বাড়িয়ে দিতে হবে আমাদেরই হাত। বিশ্বাসের হাত। বন্ধুত্বের।
ভালবাসারও।‌

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..